চার বছর আগে একদিন বাংলাদেশ থেকে একখানি বই আসে। নাম ‘লালন স্মারকগ্রন্থ‘। সম্পাদক আবুল আহসান চৌধুরী। প্রকাশক কায়সুল হক, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, ঢাকা । দু‘জনেই আমার প্রীতির পাত্র । কবি কায়সুল হকের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় শান্তিনিকেতনের সাহিত্যমেলা উপলক্ষে ১৯৫৩ সালে । আর আবুল আহসানের পিতা ফজলুল বারি চৌধুরীর সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা ১৯৩৫-৩৬ সালে যখন আমি কুষ্টিয়ার মহকুমা ম্যাজিস্ট্রেট। আর আবুল আহসানের মাতুল কাজী মোতাহার হোসেনের সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাৎ ১৯৩৩ সালে যখন আমি ঢাকায় শিক্ষারত সাব- জজ ও সহকারী দায়রা জজ। পরে আমাদের সম্পর্ক বন্ধুতায় পরিণত হয়। আবুল আহসানকে আমি ঢাকায় দেখি, যখন বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বার বার তিনবার সেদেশে ভারত সরকারের প্রতিনিধিরূপে নিমন্ত্রিত হই ।
স্মারকগ্রন্থটি বাংলাদেশে প্রকাশিত হলেও যাঁদের রচনা তাতে সন্নিবিষ্ট হয়েছে তাঁদের অনেকেই অবিভক্ত বঙ্গের অধিবাসী বা পশ্চিমবঙ্গের নাগরিক ও ধর্মে হিন্দু। এটাই স্বাভাবিক। কারণ রবীন্দ্রনাথের মতো, নজরুল ইসলামের মতো, লালন শাহ্ ফকিরও অবিভাজ্য । আর তিনি নিজেই তো নিজের সম্বন্ধে গেয়েছেন :
সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে
লালন ভাবে জাতের কী রূপ দেখলাম না এই নজরে।
স্মারকগ্রন্থটি হাতে আসার আগে আমার এইটুকু জানা ছিল যে লালনের আখড়া কুষ্টিয়া মহকুমার ছেউড়িয়ায়। কবে তার জন্ম, কবে মৃত্যু, কখনো খোঁজ নিইনি । চমকে উঠি স্মারকগ্রন্থের মলাটে ‘দ্বিশততম জন্মবার্ষিকী‘ দেখে। ভিতরে মুদ্রিত ‘দ্বিশততম জন্মবার্ষিকী (১৭৭৪-১৯৭৪)। লালন তাহলে জন্মগ্রহণ করেছিলেন দুই শতক পূর্বে। পাতা উল্টিয়ে দেখি তাঁর তিরোভাব হয় ১৮৯০ সালে। তখন তাঁর বয়স ১১৬ বছর। এরূপ দীর্ঘজীবী পুরুষ যে দুর্লভ এ বিষয়ে কি সন্দেহ আছে? তাই বলে কেন লালনের মৃত্যুর পনেরো দিনের মধ্যে প্রকাশিত ‘হিতকরী‘ পত্রিকার লিখিত সাক্ষ্যকে অকারণে অবিশ্বাস করব? মানুষ অত দিন বাঁচে না, এই যদি হয় সংশয়ের হেতু তবে এর নিরসন হয় সম্প্রতি প্রকাশিত অন্য একখানি গ্রন্থ পাঠ করলে। বইখানির নাম ‘মনের কথা অনেক কথা‘। প্রণেতা রাইচরণ দাস। প্রকাশক গ্রন্থ-গৃহ, কলকাতা। গ্রন্থের সম্পাদক রাইচরণ দাসের দৌহিত্র প্রখ্যাত সাহিত্যিক কুমারেশ ঘোষ। কুষ্টিয়ার বিশিষ্ট উকিল রাইচরণ দাস ছিলেন ‘হিতকরী‘ পত্রিকার সহ-সম্পাদক।
‘হিতকরী‘র নিবন্ধ ১৮৯০ সালে লিখিত। তার ৩৪ বছর বাদে ১৯২৪ সালে রচিত ‘সেনগ্রামের চিকিৎসা‘ নামক প্রবন্ধের শেষের দিকে রাইচরণ দাস বলছেন :
“আমি আজ পঁয়ষট্টি বৎসর বয়সে উপনীত। আমাদের গ্রামের যাহারা বেশী বয়সে মরিয়াছেন তাঁহাদের মধ্যে আনন্দ বসু, হাবাসপুরের দীন সরকার, সেওরিয়ার লালন ফকির প্রভৃতির নাম উল্লেখযোগ্য। আনন্দ বসু ১১০, লালন ফকির ১১২, দীন সরকার ১৩৩ বৎসর বয়সে মরিয়াছেন। একালে আর অত বয়সে মরিতে দেখি না।”
রাইচরণ দাসের এই উক্তি পরের মুখে শোনা গালগল্প নয়। এটা একজন বিশিষ্ট উকিলের অনুসন্ধানলব্ধ তথ্য। পঁয়ষট্টি বছর বয়সে তিনি যা লিখেছিলেন তার সঙ্গে তাঁর একত্রিশ বছর বয়সে লেখার চার বছর গরমিল। যদি তিনিই হয়ে থাকেন ‘হিতকরী‘ পত্রিকার নিবন্ধকার। আবুল আহসানের যতদূর মনে হয়, ওটি রাইচরণ দাসের রচনা। তবে কুমারেশ ঘোষের মতো আমি অতটা নিশ্চিত নই যে ওটা আর কারো নয়, রাইচরণের লেখা। নিবন্ধটিতে লেখকের নাম দেওয়া ছিল না। সে সময় ‘হিতকরী‘ পত্রিকার সম্পাদক বা স্বত্বাধিকারী সুপ্রসিদ্ধ মীর মশাররফ হোসেন টাঙ্গাইলে ছিলেন। আবুল আহসানের মতে রচনাটি মীর সাহেবের না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী। লালনের মৃত্যু ১৭ অক্টোবর। আর ঐ সংখ্যা ‘হিতকরী’ প্রকাশিত হয় ৩১শে অক্টোবর । লালনের মৃত্যুর পর পরই নিবন্ধকারের ছেঁউড়িয়ার আখড়ায় উপস্থিতির ইঙ্গিত নিবন্ধের মধ্যে পাওয়া যায়। আমি ওটি পাঠ করে আবুল আহসানের সঙ্গে একমত হয়েছি। তিনি বলেন, ‘যত দূর মনে হয়’। আমিও বলি, যতদূর মনে হয়‘। যতদূর মনে হওয়ার আরো একটা কারণ, কতকগুলি প্রয়োগ হিন্দু লেখকরাই করে থাকেন। যেমন ‘মানবলীলা সম্বরণ‘ ।
যাই হোক, চৌত্রিশ বছর বাদে পঁয়ষট্টি বছর বয়সে মানুষের স্মৃতিভ্রমও ঘটতে পারে। তাই ১১৬ না হয়ে ১১২ হওয়া সত্যের অপলাপ নয় । যেটাই সত্য হোক না কেন, লালনের জন্ম ১৭৭৪ থেকে ১৭৭৮ সালের মধ্যে। রামমোহন রায়ের বেলাও জন্মসালের গরমিল লক্ষ্য করা গেছে। দ্বিশতবার্ষিকী যদি রামমোহনের বেলা অশুদ্ধ না হয়ে থাকে তবে লালনের বেলাই বা কেন হবে? বাংলাদেশ চার বছর আগে লালনের জন্ম দ্বিশতবার্ষিকী পালন করেছে। এখানেও আর কেউ না করুক গ্রামোফোন কোম্পানী করেছে। ‘গান্ধবী‘ করেছে। বর্ধিত আকারে করার কথা ছিল অপর একটি প্রতিষ্ঠানের। বাংলাদেশ থেকে লালনপন্থী বাউল আনিয়ে নেবার আয়োজন মাঝপথে থেকে যায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আকস্মিক প্রয়াণে। আবার আমরা উদ্যোগী হয়েছি। হয়তো ১৯৭৮ সালেই কলকাতায় লালন দ্বিশতবার্ষিকী যথাযোগ্যভাবে পালিত হবে।
লালনের জন্মসাল নিয়ে প্রশ্ন নিছক সংশয়বাদীদের মুখেই শোনা যায় । এদের উপর ছেড়ে দিলে এঁরা কোন দিনই তাঁর জন্ম দ্বিশতবার্ষিকী অনুষ্ঠান করবেন না। কিন্তু লালনের জন্মস্থান নিয়েও তর্ক উঠেছে। লালনের মৃত্যুর দশ বছর বাদে বম্বের জার্নাল অব দি অ্যানথ্রোপলজিকাল সোসাইটিতে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। লেখক বাংলা সরকারের রেজিস্ট্রেশন ডিপার্টমেন্টের খান সাহেব আবদুল ওয়ালি । তিনি বলেন, –
“Another renowned and that most melodious versifier, whose dhuyas are the rage of the lower classes and sung by boatmen and others was the far famed Lalan Shah. He was a disciple of Seraj Shah and both were born at village Harishpur, Sub- Division Jhenidah, District Jessore, having travelled long and made pilgrimages to Jagannath and other shrines, and met with all sorts of devotees he at last settle at Mouza Siuriya near the sub-divisional head-quarters of Kushtia (Nadia). Here he lived, feasted, sang and worshipped and was known as Kayastha and here he died some ten years ago. His disciples are many and his songs are numerous.” (Journal of the Anthropological Society, 1900, Vol. V, No. 4).
… একদিকে আবদুল ওয়ালি সাহেবের ১৯০০ সালের ইংরেজী প্রবন্ধের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হরিশপুর, ঝিনাইদহ, যশোহর। অন্যদিকে বসন্তকুমার পালের ১৩৩২ সনের শ্রাবণের ‘প্রবাসী’তে প্রকাশিত প্রবন্ধের উপর স্থাপিত ভাঁড়ারা, থানা কুমারখালী, মহকুমা কুষ্টিয়া, জেলা নদীয়া। বসন্তবাবুর রচনাকাল আবদুল ওয়ালি সাহেবের রচনাকালের সাতাশ বছর পরবর্তী। বসন্তবাবুর সঙ্গে যাঁরা একমত তাঁদের মধ্যে অগ্রগণ্য অধ্যাপক মুহম্মদ মনসুরউদ্দীন ও ডক্টর উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য । পণ্ডিতে পণ্ডিতে দ্বন্দ্ব।
সিরাজ সাঁইয়ের জন্মস্থান হরিশপুর, তাই বলে কি ধরে নেওয়া যায় যে, লালন সাঁইয়ের জন্মস্থানও হরিশপুর? সেইজন্যে কারো কারো মতে লালন শুধু শিষ্য ছিলেন না, তিনি ছিলেন পুত্র। একটি দলিল পাওয়া গেছে। সেটি ১৮৮০ সালের ১৯শে জানুয়ারি তারিখে রেজিষ্ট্রিকৃত। তার বয়ান নিচে দেওয়া গেল –
“পাট্টা গ্রহীতা – শ্ৰীযুত লালন সাঁই, পিং মৃত সিরাজ সাঁই, জাতি মুসলমান, পেশা ভিক্ষা ইত্যাদি । সাকিন ছিউড়ে, পরগণা ভ্রাহিমপুর, ইস্টাসন ভলকো, সাবরেজেস্টারি কুমারখালী ।”
আনোয়ারুল করীম সহেব বলছেন লালন শাহ শৈলকুপা থানার এলাকাধীন পরগণা ফতেজঙ্গপুর এলাকাধীন পরমানন্দপুরে একটা আখড়া বাড়ী নির্মাণের জন্য কয়েক বিঘা জমি কেনেন । এই দলিলে তিনি নিজের নাম স্বাক্ষর করেন।
দলিলে পিতার নামই উল্লেখ করা হয়। গুরুর নাম নয়। অথচ বাউল ফকির সন্ন্যাসীদের পিতৃনাম করতে বাধা আছে। সাধারণত এঁরা কেউ দলিল সম্পাদন করেন না। লালন করেছিলেন। তাঁকে তাই পিতার নামের স্থলে গুরুর নামই উল্লেখ করতে হয়েছিল । এটুকু মেনে না নিলে আমাদের উল্টো বিপদে পড়তে হয়। দরবেশদের সঙ্গে নারী থাকলেও তাঁদের সন্তানাদি হয় না। সাঁই পদবীটা এমন একটা পদবী নয় যা কেউ পুত্রকে দিতে পারে বা কেউ পিতার কাছ থেকে পেতে পারে। এটা গুরুশিষ্য পরম্পরার ইঙ্গিত করে, পিতাপুত্র পরম্পরার নয়। লালন যে সিরাজের পুত্র ছিলেন এর পোষাক প্রমাণ তাঁর হাজার হাজার গানের একটিতেও নেই। আর পেশা যাদের ভিক্ষা ইত্যাদি তারা সংসারী মানুষের মতো সন্তান সৃষ্টি করতে যাবেই বা কেন? লালন যে সম্পত্তি খরিদ করেছিলেন সেটা তাঁর শিষ্যদের নিয়ে থাকবার আখড়ার জন্যে। তাঁর ছেঁউড়িয়ার আখড়াও ছিল সেইরূপ সম্পত্তি।
‘হিতকরী‘ পত্রিকার নিবন্ধেই তো রয়েছে, “আখড়ায় ইনি সস্ত্রীক বাস করিতেন। সম্প্রদায়ের ধর্মমত অনুসারে ইহার কোন সন্তান-সন্ততি হয় নাই। শিষ্যদের মধ্যেও অনেকের স্ত্রী আছে, কিন্তু সন্তান হয় নাই। এই আশ্চর্য ব্যাপার শুধু এই মহাত্মার শিষ্যগণের মধ্যে নহে, বাউল সম্প্রদায়ের অধিকাংশ স্থানে এই ব্যাপার লক্ষিত হয়।”
দলিলের বয়ানের ঐ অংশটির উপর নির্ভর করে লালনকে সিরাজের পুত্র বলা চলে না। সুতরাং সিরাজের মতো তাঁরও জন্মস্থান যে হরিশপুর এটা প্রমাণ করতে হলে আরো অনুসন্ধান করতে হবে। এখন পর্যন্ত যা পাওয়া গেছে তা জোরালো প্রমাণ নয়। তাই করীম সাহেবের ধারণা লালনের জন্ম হিন্দু পরিবারে, যদিও পরবর্তীকালে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। জন্মসূত্রে ইসলাম ধর্মাবলম্বী না হওয়াতে তাঁর ‘মুসলমানী‘ বা
‘খাতনা‘ হয় না।
. কিন্তু এমনও তো হতে পারে যে সিরাজ সাঁই তাঁকে দরবেশ দীক্ষা দিয়ে সাঁই বা শাহ ফকির করে নিয়েছিলেন। অথচ ইসলাম ধর্মে দীক্ষা দেননি। তার প্রয়োজনও ছিল না। দরবেশদের মধ্যে হিন্দুও আছেন। ফকিরদের মধ্যেও তাই। তেমনি বাউলদের মধ্যে মুসলমানও আছেন। এসব সম্প্রদায়কে হিন্দুরাও হিন্দু সমাজে নেয় না। মুসলমানরাও মুসলিম সমাজে নেয় না। সন্তানাদি না হলে সমাজের শাসনও খাটে না। এসব সম্প্রদায়ের ধর্মমতও শাস্ত্রশাসিত নয়। শাস্ত্রের বাইরে, সমাজের বাইরে যাদের স্থিতি তাদের বেলা ধর্মান্তরীকরণের প্রশ্নই ওঠে না। ইসলাম ধর্মে দীক্ষা নিতে হলে শরিয়তী মুসলমানের কাছে যেতে হয়। শরিয়তীরা বরাবরই লালনবিরোধী ।
এনসাইক্লোপীডিয়া ব্রিটানিকার ১৯৬৪ সালের সংস্করণ থেকে অংশবিশেষ তুলে দিচ্ছি—
“FAKIR, a term generally used in Arabic speaking countries for a mendicant dervish (q.v.), is the transliteration of an Arabic word meaning “needy person”? It refers to men’s spiritual need of God, who alone is self-sufficient (Koran xxxv, 15). Although of Muslim origin it has come to be applied in India to Hindus as well largely replacing goswami, sadhu, bhikshu (bhikkhu) bawa and other designations. Fakirs are common to all creeds in India, and in theory they belong to a religious order, but Muslim orders do not profess celibacy and the Hindu and other orders do not enforce it.” (Encyclopedia Britannica, 1964, vol. 9, page 42).
‘DERVISH, in the middle east is a member of a Muslim religious fraternity, whether mendicant or not, resembling in some respects a Christian monastic order. The fraternities arose within Sufism (q.v.), which is in origin religion at an individual level, the single soul seeking its own salvation; occasionally such an individual would gather round himself a band of devotees under instruction, who shared his life and religious practices… Besides the dervishes resident in the community there are many lay members (including women), both classes now being largely drawn from the lower levels or society… (Encyclopedia Britannica, 1964, Vol. 7, Page 279).
যথাস্থানে সুফী মার্গ সম্বন্ধেও প্রবন্ধ আছে। কিন্তু উদ্ধৃতি অনাবশ্যক । দরবেশরা সুফী মার্গের সাধক। সুফী গুরুদের পদবী হয় শাহ্। চলতি বাংলায় সাঁই। এদশে বহিরাগত সুফী ধারার সঙ্গে যোগ দিয়েছে আর একটি ধারা। সেটি এদেশের নিজস্ব। সহজিয়ার মর্মকথা চণ্ডীদাস বলে গেছেন, “শুনহ মানুষ ভাই, সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই।” এখানে ‘মানুষ‘ শব্দটির দুই অর্থ। আমরা সবাই মানুষ, আবার আমাদের ভিতরে, বাইরে ও উপরে যিনি বিরাজ করছেন তিনিও মানুষ। মনের মানুষ । অজানা মানুষ । আলেকের মানুষ । অধরচাঁদ । অচিন পাখী । সুফী মার্গের সঙ্গে এখানে মেলে না। সেদিক থেকে লালন হয়তো সুফী দরবেশ নন । বাংলার বাউলরা সেদিক থেকে সহজিয়া সাধক । কিন্তু সেই একমাত্র দিক নয় । আরো একটা দিক আছে । সেটা লীলাবাদী রসের সাধনা । গৌড়ীয় বৈষ্ণবরা যে সাধনায় প্রেমাস্পদের প্রেম আস্বাদন করেন । রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, “দেবতারে প্রিয় করি, প্রিয়েরে দেবতা।”
তিনটি ধারাতেই লালনের অভিষেক ছিল বলেই তাঁকে কোনো একটির দ্বারা চিহ্নিত করা যায় না। কোনো লেবেলই তাঁর গায়ে বসে না। অথচ তিনি একজন উচ্চাঙ্গের সাধক। ‘হিতকরী‘ পত্রিকার নিবন্ধটির নাম ‘মহাত্মা লালন ফকীর‘। এই বিশেষণটি অযথা প্রযুক্ত নয়। সাধনার দ্বারা তিনি দেশের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীরও হৃদয় জয় করেছিলেন। (১৯৭৮)।