লালনের সাঁইজি পর্ব ০১ | অনুদাস

বল বল বল সখী গুরু কেমন বস্তু ধন,

মন্ত্র দাতা দীনে ধন্য করিলে দাসের জীবন

জানী না গুরু তত্ত্ব, গুরু কেমন বস্তু অর্থ,

আমার নাই জ্ঞান পদার্থ নয়নহীন নয়ন,

জিজ্ঞাসিলাম এসব তত্ত্ব বলো সব কারণ।

কিবা আচার কিবা বিচার কি প্রকার করব যাজন

কি ভাব ভাবিব মনে কি সম্বন্ধ গুরুর সনে

ভাবি সদা মনে মনে চিন্তা অনুক্ষণ ৷৷

হঠাৎ কারে আসি কৃপা করিলেন যেজন

একান্ত ঘুচাও ভ্রান্ত ব্যাকুল মোর মনমন।

মন্ত্রদাতা গুরু মূর্তি দেখিতে পাই মানুষ মূর্তি

কেমন করে করব ভক্তি বলো এসব কারণ।

এহতে তরিব সই ভবাদী জীবন

হাউড়ে বলে কৰ্ম্ম ফলে কতদিন করিব কাল যাপন ।।

হাউড়ে গোঁসাই।

গুরুতত্ত্ব

যাহা হইতে গুরু বস্তু নাহি সুনিশ্চিত

তথাপি গুরু ধর্ম্ম গৌরব বর্জ্জিত।

চৈতন্য চরিতামৃত। আদি : ৪র্থ

গুরুমাতা গুরুপিতা গুরু জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা, গুরু হল জগতের পিতা, শিক্ষা গুরু, দীক্ষা গুরু পথের পরিচয়। আর এক গুরু আছেন যিনি রাগেরই আশ্রয়। যে গুরু সে কল্পতরুআছে দ্বিদলে লুকিয়েরে। বামা দ্বিদলে লুকিয়ে রইলি কে রে।

অজ্ঞাত।

* হলে দ্বিদল নির্ণয়, ভেদতত্ত্ব সব জানা যায়।লালন

* সহস্রদলে বসতি তার দ্বিদলে তার বারামখানা।লালন

* ‘দ্বিদলএর অনেক নাম আছে; যথাআজ্ঞাচক্র, কাশি, অধিমুক্ত, বারাণসী, ত্রিবেণী, বিরজা, গুহা, দহর, সত্যলোক, অমৃতস্থান, অকুস্থান, গুরুস্থান, শিবস্থান, বিষ্ণুলোক, কুট বা কুটস্থান, নাসাগ্র, নাসিকামূল, হৃদয়।-(স্বরূপানন্দ পরমহংস)

* দ্বিদলে যাঁর বাস তিনিই আত্মারূপি গুরু। পরমগুরু গোবিন্দ বা সাঁইজীর সঙ্গে যাঁর ভাব আছে আবার জীবের সহিত তার নিকট সম্পর্ক। ইনিই এজগতের পথ প্রদর্শক এবং ত্রাতা। তাই লালন বলেন—“গুরু দেখি কি গোবিন্দ দেখি।গুরু ব্রহ্ম একাকার।গুরু কৃষ্ণ বৈষ্ণব তিনে এক দেহ কলিজীব তরাইতে আর নাই কেহ।”— চৈতন্য চরিতামৃত। এক ভাগবত বড় ভাগবত শাস্ত্র, আর ভাগবত ভক্ত ভক্তি রস পাত্র।চৈতন্য চরিতামৃত। আদি ১ম। এই ভক্তি রস পাত্র ভাগবতই গুরু।কৃষ্ণ নাম মহামন্ত্র কর্ণমূলে দিয়া, সূক্ষ্মরূপে আছেন গুরু আত্মাতে বসিয়া।”–বিবর্ত বিলাস।

* লালন বলেন—“রাজী হলে দ্বারোয়ানী দ্বার খুলিয়ে দিবেন তিনি”–ইনিই গুরু। কলিতে গুরু গৌরাঙ্গ রূপ, অর্থাৎ উজ্জ্বল স্বর্ণ সাদৃশ্য বর্ণ। সাক্ষাৎ চৈতন্য স্বরূপ, স্বরূপ চৈতন্য। স্বরূপ চৈতন্যই নিত্য নবদ্বীপের চৈতন্য গুরু, চেতন গুরু, হাউড়ে বলেন—‘চৈতন গুরু বর্ত্ত করে মর্ত্তে করো আগমন।কিদুই আত্মা, বিন্দুই চৈতন্য।বিন্দুকে জানিবে আত্মা চৈতন্য ঈশ্বর, নবদ্বীপে বাস তার প্রত্যক্ষ গোচর।”–বিবর্ত বিলাস।ভ্রান্ত মনরে আমার, মানুষের গুরু দুই প্রকার, জীব চৈতন্য সাকার গুরু পরমাত্মা হয় নিরাকার। ’—ব্রহ্মানন্দ।হরি গুরু গুরু হরি,”-রামকৃষ্ণ,

** গুশব্দে অন্ধকার।

রু-শব্দে আলো।

আলো এবং অন্ধকার একত্রিত রূপে যাহা এবং একত্রেই তাদের দেখা যায়, দুইকে ছাড়া তাকে দেখা অসম্ভব।এক দেহে দুই রূপ, একই স্বরূপ। গুরু যদি ইচ্ছা করে গৌর দিলেও দিতে পারে। তাই বিন্দু দান করলো যে, জন্মে জন্মে গুরু সে।”-বিবর্ত বিলাস।মানুষ চক্ষু থাকতে পায় না দেখতে গুরুতে না দেখিয়ে দিলে, সামান্যে কি সে ধন মিলে।”– লালন

তত্ত্বমূল, সূক্ষ্ম এবং স্থূল, তত্ত্ব এই ত্রিবিধ। মূলই স্বয়ং সূক্ষ্মই গুরু এবং স্থূলইজীব। স্থূলজীব স্থূলরস আস্বাদ করতে করতে এই স্থূলরস সম্পর্কে এই ধারণা পোষণ করে যেস্থূল রস তো পশুতেও লাভ করে বা আস্বাদ করে। তাহলে মানুষ শ্রেষ্ঠ একথার তো কোন অর্থ হয় না। তাই সূক্ষ্মতত্ত্ব বা সূক্ষ্মরসের আবশ্যকতা আছে। জগৎপিতামূল থেকে সূক্ষ্মে এবং তার পর স্থূলে আবির্ভূত হন। আর জীবস্থূল থেকে সূক্ষ্ম হয়ে মূলে যায়। জীব এবং পরমের উভয়েরই আশ্রয়স্থলসূক্ষ্মতত্ত্ব। এই সূক্ষ্মতত্ত্বকেইঅপ্রাকৃত তত্ত্ব বলে। একে নিত্য লীলা বিলাসও বলে। নিত্য লীলা গোলোকের খেলা খেলছে শ্যাম বৃন্দাবনে। গুরু কৃষ্ণ, সাধক দেশের কৃষ্ণ নন্দের নন্দন। (বসুদেব সুত নয়) কারণ বৃন্দাবন লীলার সার রাধা প্রেমই এবার জীবকে তিনি অর্পণ করলেন। এই গুরুরূপি কৃষ্ণের দ্বিবিধ বিলাস। ঐশ্বর্য্য এবং মাধুর্য্য। ঐশ্বর্য্য ছয়টি। যথাঐশ্বর্য্যশ্চ, বীর্যশ্চ, জ্ঞান, বৈরাগ্যচাপি যশোশ্রীয়ম। একটি মাধুৰ্য্য প্রেমভক্তি। প্রেম নাম প্রচারিতে এই অবতার সত্য এই হেতু কিন্তু এহো বহিরঙ্গ, আর এক হেতু আছে অন্তরঙ্গ, অবতারে আর এক আছে মুখ্য বীজ, রসিক শেখর কৃষ্ণ, সেই কার্য্য নিজ। চৈতন্য চরিতামৃত। আদি ৪র্থ। এবার বৃন্দাবন আর নবদ্বীপে হোল একাকার। রাধাকৃষ্ণ এবং গৌর একই তত্ত্ব, একই গুরু। যেরূপ গৌর গোলোক থেকে বৃন্দাবন হয়ে নবদ্বীপ এসেছিলেন, তেমনই জীবন নবদ্বীপ থেকে বৃন্দাবন হয়ে গোলাক বা নিত্যে যাবে। দুই গুরু এক ঠাঁই পাইব কেমনে।বিবর্ত্ত বিলাস/ ৪র্থ।

নন্দের নন্দন বলেন

যদ্যপি কৃষ্ণ সৌন্দর্য্য মাধুর্য্যের ধুর্য্য

ব্রজ দেবী সঙ্গে তার বাড়য়ে মাধুর্য্য

চৈতন্য চরিতামৃত। মধ্য/অষ্টম

আমা হইতে গুণী বড় জগতে অসম্ভব,

একলি রাধিকা তাহা করি অনুভব,

চৈতন্য চরিতামৃত। আদি/৪র্থ।

দোঁহা যে সম রস ভরতমুনি মানে

আমার ব্রজেররস সেও নাহি জানে

চৈতন্য চরিতামৃত। আদি/৪র্থ।

ব্রজনাথ ব্রজেতে ছিল রসের ভিয়ান পাতিল

তাক না জেনে ধাক্কা খেয়ে নদীয়া এলো ।৷লালন

স্মরগরল খণ্ডনং মম শিরসি মণ্ডনম্

দেহি পদ পল্লব মুদারম্ গীত গোবিন্দ,

রাধিকা যে প্রেম গুরু আমি শিষ্য নট

সদা আমা নানা নৃত্যে নাচায় উদ্ভট

চৈতন্য চরিতামৃত। আদি/৪র্থ।

* জগতে রাধা প্রেমের উপরে যে আর কোন তত্ত্ব নেই নন্দের নন্দন শ্রীহরি নিজ মুখে বারবার সেটা স্বীকার করেছেন। তিনি রাধার বিশুদ্ধ নির্মূল প্রেমের তুল্য জগতে আর কিছুই পাননি। তাই কলি যুগে কৃপা বসে আবির্ভূত হয়ে এই সিদ্ধির দেশের তত্ত্ব কৃপা করে জীবকে দিয়ে গেলেনতাই তিনি দয়াল।

ডাকলে যে জন দয়া করে,

দয়াল বলে বলে কে তারে

না ডাকলে যে দয়া করে

দয়াল সে জনা।অজ্ঞাত

* প্রকৃত বিচারে জীবমানবকৈলাস, বৈকুণ্ঠ, বা দ্বাদশ সিদ্ধি লাভ করতে পারলেই তৃপ্ত হন। কিন্তু কিছু সাধকএই প্রকার চাওয়া পাওয়ার হেতু যুক্ত ভগবান প্রীতিতে সন্তুষ্ট নয়। তাঁরা বিনা কারণেই প্রভুকে, জগৎপিতাকে, ভালোবাসেন।হেতু শূন্য ভালোবাসায় বাস করে সেই কৃষ্ণ ধন।লালন। যার নাম অহৈতুকি ভক্তি।

আত্মারামশ্চ মুনয়ো নির্গ্রন্থা অণুরূক্রমে

কুৰ্ব্বন্তি অহৈতুকং ভক্তিমিথম্ভূতগুণহেরি :

চৈতন্য চরিতামৃত। মধ্য/২৪। *শ্রীমদ্ভাগবৎ

কৃষ্ণ বলেনহে অর্জুন এই প্রকার সাধকগণের দেবার মত কোন প্রকার ধন আমার নেই তাই ওদের মত করে যদি আমি ওদেরকে এই ভজন ফিরিয়ে দিতে পারি তবে এর পুরস্কার হয়। তাই রাধার প্রেমেই আমি ঋণী হলাম। আমার প্রকার করা ছাড়া রাধার ঋণ শোধ হয় না। দ্বাপরে আমি অঙ্গীকার করেছি যে কথাউহাই আমার এবারের লীলা বিলাসাস্বাদন, জীবে দয়া এবং প্রেম ধর্ম্মের প্রচার।

প্রেমের মুরতি রাধা, মাধুর্য্যের সার।চৈতন্য চরিতামৃত। মধ্য/৮ম।

* * * *

শ্রীরাধার প্রতি শ্রীকৃষ্ণের অঙ্গীকার (দাসখৎ

ইয়াদীকৃত্য গুণসমুদ্র সৎসাধু শ্রীরাধা

সচ্চরিত্র চরিতেষু পুরাহ মম সাধা।।

তস্য খাতকঃ হরি নায়কঃ বসতি ব্রজ পুরি

তস্য কৰ্জ্জ পত্র মিদং লিখিতং সুকুমারী ।।

তারিকস্য দ্বাপরস্য পরিশোধ কলিযুগে।

এই কড়ারে খৎ লিখিনুঈয়াদী মঞ্জরী ভাগে।।

ইহারই লভ্য পাইবে তভ্য বলি প্রকাশিয়া

সুদ সহিতে শোধ করিব সব কলিযুগ ভরিয়া।।

হাসিব, কাঁদিব, নাচিব, গাইব, ভাসিব প্রেম সাগরে,

হরিনাম দিয়ে জগৎ মাতাইয়ে উদ্ধার করিব সব জীবেরে।

অজ্ঞাত

আমি যারে ডাকি দয়াল বলে,

সে থাকে অখণ্ড ব্ৰহ্মাণ্ড পরে নিত্য কমলে।পাঞ্জুশা

* ‘কৃষ্ণের গায়ত্রীবীজ রাধার স্বরূপ

বিবর্ত্ত বিলাস। ১ম/পৃ. ১৫।

* “স্বরূপ শক্তি হ্লাদীনী নাম যাহার’–চৈতন্য চরিতামৃত।

* বিন্দু, চৈতন্য, স্বরূপ, হলাদীনী শক্তি তত্ত্ব বতু চিৎ শক্তি মূলে একই সেই শ্রীগুরু তত্ত্ব।

শ্রীগুরুর চরণে রতি সেই সে উত্তম গতি,

সে প্রসাদে মিটে সর্ব আশা।প্রার্থনানরত্তোম দাস।

একই বীজে পঞ্চমুরতি দেখায় যে জন

গুরুকে শ্রীগুরু রূপে পূজিতার কারণ।।

* এই একই বীজ হচ্ছে কৃষ্ণ বীজ। অর্থাৎ গুরুবীজ। মানুষ প্রথম জন্ম লয় রজ বীজে, দ্বিতীয় জন্ম নেয় গুরুবীজে (ব্রহ্মবীজে), তৃতীয় জন্ম নেয় সহজের বীজ মানুষ তত্ত্বে।

প্রথম জন্ম মাতৃগর্ভে, দ্বিতীয় জন্ম দীক্ষয়াঃ

শিক্ষায়াঞ্চ ত্রয়োজন্ম বৈষ্ণবানাং প্রকীর্তিতা।

* এবে কলিতে দীক্ষা এবং শিক্ষার কর্ত্তা একই জন। গৌরই দাতা শিরোমণি। তিনিই কল্পতরু।

এবে অপ্রকট লীলা কৈছে প্রেম হয়?

প্রেম যাতে হয় মন করহ উপায়।বিবর্ত্ত বিলাস/৪র্থ।

* * * *

রসিকের সঙ্গ করি হেন তত্ত্ব জান,

সর্বেন্দ্রিয়ে কৃষ্ণ অনুশীলন।বিবর্ত্ত বিলাস/৪র্থ।

সকল ইন্দ্রিয়েরই হবে, কোন ইন্দ্রিয়েই নয়

মহাপ্রভুর শ্রীমুখের বাণী গোস্বামী লেখয়।বিবৰ্ত্ত বিলাস।

* * * *

কৃষ্ণ অনুরাগ বিনে ঐশ্বৰ্য্য জানে,

ভজিলেও নাহি পায় ব্রজেন্দ্র নন্দনে।চৈতন্য চরিতামৃত

* * * *

অনুরাগে যার বাঁধা হৃদয়

তার সেই রূপ চক্ষে উদয়,

লালন বলে শমনের ভয়

এড়ায় সেযে অবহেলে।লালন

নিত্যলীলা

আপনার আপনি রে মন না জান ঠিকানা

পরের অন্তর কোটিসমুদ্র কিসে যাবে জানাশোনা ।।

পর অর্থ পরমেশ্বর আত্মারূপে করেন বিহার,

দ্বিদলে বারামখানা।

শতদল সহস্রদলে সাঁইয়ের আনন্দকরুণা।।

কেশের আড়েতে সেই যে,

পৰ্ব্বত লুকাইয়ে আছে, দরশন হোলনা।

হেট নয়ন যার নিকটে তার সিদ্ধ হয় কামনা ।।

সিরাজ সাঁই বলেরেলালন

গুরুপদে ডুবে এখন আত্মার ভেদ জানলে না।

আত্মার আত্মা পরমাত্মা ভিন্ন ভেদ ভেবনা।লালন

অনুরাগের মিলিতং ব্রজে তার বাস

* অনুশব্দে অতি ক্ষুদ্র তত্ত্ব, রাগ শব্দে আবিষ্টতা অর্থাৎ সূক্ষ্ম একটি তত্ত্ববতুর প্রতি তীব্র আবিষ্টতার নাম অনুরাগ। এই ক্ষুদ্রবতুই কিছু, অপ্রাকৃত বিন্দু।

বিন্দুনাং আকাশো জানন্তি অনল প্রদীপ কণিকা

জোনাকি কীট সদৃশঃ পরত বিধিয়তে।।

পরতত্ত্বইপরমেশ্বর তত্ত্ব। লালন বলেন পর বলতে পরোয়ার, পরমেশ্বর। কিছুই সাকার ব্রহ্মাণ্ড। এই বিন্দুকে রাধারাণী ভজেছিলেন। কিদুর মধ্যে কৃষ্ণ মিলিয়ে গিয়ে গোরা রূপ তিনি দ্বাপরেই দর্শন করেছিলেন। ইনিই নিত্যের গৌর, এরই বিনা রজবীজে জন্ম। গুরুবীজ়ে তাকে চেনা যায়। শঙ্কর বলেন বিন্দুরূপ, ঈশ্বরের সাকার লীলা এখানেই দর্শন হয়। বিন্দুই বৃন্দাবন।বৃন্দাবন রম্যস্থান, দিব্যচিন্তামনি ধামা”–চৈতন্য চরিতামৃত। বিন্দুবৃন্দাবনইকলির সাধনভজন। একা একা দর্পণে সাধলে তাকে স্বকীয়া বলে, আর কিবা নারী কিবা পুরুষ, দুইজনে সাধলে তাকে পরকীয়া বলে।

পরকীয়া রাধাভাব এই প্রেমা হইতে

এই প্রেমার বেশ কৃষ্ণ কহে ভাগবতে।

চৈতন্য চরিতামৃত। আদি/ ৪র্থ।

* ঈশ্বরতত্ত্ব সব সময়ই পূর্ণ তত্ত্ব, বিন্দু পূর্ণ তত্ত্ব। কিন্তু তার আরও পূর্ণতার প্রয়োজন। তারপূর্ণ তরোএবংপূর্ণ তমরূপ পরিগ্রহের প্রয়োজন। ভক্তই তার আশ্রয়। তাই—“সর্ব ঘটে আছে কৃষ্ণ, কোন ঘট নাই খালি। কোন ঘটে বিকশিত কোন ঘটে কলি।কলি কালঅর্থাৎ কুঁড়ি অবস্থা। কারও সে ফুল ফোটে, কারও কুঁড়িতেই ধ্বংস হয়। যার ফোটে তারই প্রেম ফুল এবং তার মধু বা ঘ্রাণ আস্বাদন

হয়। লালন বলেন

কালো ভ্রমর জানে মধুর মর্ম

হায়রে গুবরে পোকায় জানবে না।

* * * *

যথাকার বিন্দু যদি তথায় মজিবে,

তবে কেন সেই দেহ অপ্রাকৃত না হবে।চৈতন্য চরিতামৃত

মলে ঈশ্বর প্রাপ্ত হয় কেন বলে।

এই না কথার পাই না বিধানকারো কাছে শুধালে।

মলে যদি হয় ঈশ্বর প্রাপ্ত,

সাধু অসাধু সমস্ত,

তবে কেন জপতপ এতো করোরে জলস্থলে।

যে পঞ্চেতে পঞ্চভূত হয়,

মলেও যদি তাহাতে মিশায়

ঈশ্বর অংশ ঈশ্বরে যায়, স্বর্গনরক কার মেলে ?

দেখো জীবের এই শরীরে

ঈশ্বর অংশ বলি কারে

লালন কয় চিন্লে তারে

মরার ফল জ্যান্তেই ফলে।লালন

বিন্দু

চেতন গুরুর সঙ্গকর ঘুঁচে যাবে অন্ধকার

তখন, জ্ঞান আলোক দেখতে পারি ব্রহ্মময়

হংস তত্ত্ব, সাধন তত্ত্ব, সোহং তত্ত্ব সাধ্য তার।হাউড়ে

* * * *

ঈশ্বরের তত্ত্ব যৈছে জ্বলিত জ্বলন,

জীবের স্বরূপ তৈছে স্ফুলিঙ্গের কণ।

চৈতন্য চরিতামৃত। আদি/৮ম।

স্ফুলিঙ্গের কণা বা কণাই বিন্দু চৈতন্য।

* * * *

বাউল বলেন

তেল নাই সলিতা নাই সদাই জ্বলে বাতি

গুরুমুখে শোন তার ঐস্থানে স্থিতি।

লালন বলেন

সে যে জল কি হুতাশন, মাটি কি পবন

কেউ বলে না তা নির্ণয় করে।লালন।

* মূলতপঞ্চভূতকে, পঞ্চ আত্মাকে, আত্মস্থ করেছেন যিনি তিনিই কৃষ্ণ, “পঞ্চ তত্ত্ব আত্মকং কৃষ্ণং।”—চৈতন্য চরিতামৃত। আদি/৭ম।

কৃষ্ণের মধ্যে আরও চার মহাজনকে আমরা পাই; যথা— 

তেকমলাকান্ত,

কারেরাধা,

তেস্বয়ং শম্ভু ইথে নাই আর বাধা

তে নিরঞ্জনঅতিশঃ সতৃষ্ণ,

এই চারি অক্ষরে সাধু বলে কৃষ্ণ কৃষ্ণ।

* কৃষ্ণ জগৎ পিতা, তারে যে না ভজে বাপ,

জন্মে জন্মে তার হয় পিতৃদ্রোহী তাপ।চৈতন্য ভাগবত

লালন বলেন

তুমি গুরু পতিত পাবন পরম ঈশ্বর,

অখণ্ড মণ্ডলাকার ব্যাপ্ত জগৎ চরাচর

ব্রহ্মা বিষ্ণু শিবএই তিনে ভজে তোমায় নিশিদিনে

আমি জানিনাকো তোমা বিনে তুমি গুরু পরাৎপর।

(ক্রমশ্য প্রকাশিত)

শেয়ার করুন:

অন্যান্য পোস্ট

আরশি নগর কেমন শহর ? বিষয় ফ্রয়েডের আবিষ্কার ও মহাত্মা লালন ফকির | সলিমুল্লাহ খান

এই লেখার বিষয় মহাত্মা লালন ফকির। তবে মালিকের অনুমতি পাই তো প্রথমে বন্দনা করি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । প্রখ্যাত রবীন্দ্র-বিশেষজ্ঞ

বিস্তারিত

ফ কি র লা ল ন শা হ | ডক্টর উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য

রবীন্দ্রনাথ-সংগৃহীত লালন শাহ ফকিরের কুড়িটি গান সর্বপ্রথম ‘প্রবাসী’র ‘হারামণি’ শীর্ষক বিভাগে প্রকাশিত হয় (প্রবাসী, ১৩২২, আশ্বিন-মাঘ সংখ্যা)। ইহার পূর্বে লালনের

বিস্তারিত

ফকির লালন শাহের ভাবচর্চাঃ শ্রুতি ও স্মৃতির সংস্কৃতি এবং ছাপাখানা । ফরহাদ মজহার

শ্রুতি ও স্মৃতির সংস্কৃতি কিম্বা কান ও কণ্ঠের জগতের সঙ্গে লিপি ও ছাপাখানার সংস্কৃতি বা জগতের পার্থক্য নিয়ে বিস্তর কথাবার্তা

বিস্তারিত

You cannot copy content of this page