Customize Consent Preferences

We use cookies to help you navigate efficiently and perform certain functions. You will find detailed information about all cookies under each consent category below.

The cookies that are categorized as "Necessary" are stored on your browser as they are essential for enabling the basic functionalities of the site. ... 

Always Active

Necessary cookies are required to enable the basic features of this site, such as providing secure log-in or adjusting your consent preferences. These cookies do not store any personally identifiable data.

No cookies to display.

Functional cookies help perform certain functionalities like sharing the content of the website on social media platforms, collecting feedback, and other third-party features.

No cookies to display.

Analytical cookies are used to understand how visitors interact with the website. These cookies help provide information on metrics such as the number of visitors, bounce rate, traffic source, etc.

No cookies to display.

Performance cookies are used to understand and analyze the key performance indexes of the website which helps in delivering a better user experience for the visitors.

No cookies to display.

Advertisement cookies are used to provide visitors with customized advertisements based on the pages you visited previously and to analyze the effectiveness of the ad campaigns.

No cookies to display.

ফকির খোন্দকার পাঞ্জু শাহ

বাংলার সুফি ফকিরদের মধ্যে লালনের স্থান সর্বোচ্চ, কিন্তু লালনের মৃত্যুর পরে যিনি সারা বাংলার ফকির মহলে লালনেরই মত উচ্চ স্থান লাভ করিয়াছিলেন, তিনি ফকির পাঞ্জু শাহ। লালনের মৃত্যুর অব্যবহিত পত হইতেই প্রায় পঁচিশ বৎসর যাবৎ পাঞ্জু শাহ অনেকটা লালনের শূন্যস্থান পূরণ করিয়া রাখিয়াছিলেন। লালনের মত তাঁহার রচিত গান বাংলার সর্বত্রই পাওয়া যায় এবং ফকির মহলে বিশেষ  শ্রদ্ধার সঙ্গে গীত হয়।

১২৫৮ সালের শ্রাবণ মাসে ফকির পাঞ্জু শাহ যশোহর জেলার শৈলকূপা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলমান পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। ইনার পিতা খাদেমালী খোন্দকার সাহেবের ইনি প্রথম পুত্র। 

ইনার পিতা একজন সঙ্গতিসম্পন্ন লোক ছিলেন। কু-চক্রী ষড়যন্ত্রে উত্যাক্ত হইয়া বিষয় বিভব তুচ্ছ বোধে ইনি স্বীয়-স্ত্রী ও বালক পুত্রসহ যশোহর জিলার হরিনাকুন্ড থানার অধীন হরিশপুর গ্রামের বিশিষ্ট সম্ভ্রান্ত, অবস্থাপন্ন বিশ্বাস পরিবারের মাননীয় ফকির আহমদ বিশ্বাস দিগর সাহায্যে ও আন্তরিক সহানুভূতি পাইয়া উক্ত হরিশপুর গ্রামে দারিদ্রভাবে বসবাস করেন। তাঁহার আত্মসম্মান জ্ঞান ও ভদ্রতায় তিনি গ্রামস্থ সকলের শ্রদ্ধাভাজন হন।

ফকির পাঞ্জু শাহের পিতা একজন গোঁড়া মুসলমান ছিলেন। শাস্ত্রীয় আচার অনুস্থানে নিষ্ঠাবান হইয়া ইনি বাংলা ভাষা শিক্ষারই বিরোধী হন এবং স্বীয় পুত্রকে আরবি, ফারসি ও উর্দু শিক্ষাদানে প্রবৃত্ত হন। ১৫/১৬ বৎসর বয়সে ফকির পাঞ্জু শাহ গোঁড়া পিতার ভয়ে, বিশাওাস পরিবারের মহরালী বিশ্বাসের নিকট স্বতঃপ্রবৃত্ত হইয়া গোপনে বাংলা ভাষা শিক্কাহ্য মনোনিবেশ করেন। 

তৎকালে হরিশপুর  গ্রাম বিশেষ সমৃদ্ধ ছিল। সকল শ্রেনীর হিন্দু-মুসলমান পরস্পর মিলিতভাবে বসবাস করিতেন। সুফি ফকিরের মধ্যে জহরদ্দীন শাহ, পিজিরদ্দীন শাহ, ফকির লালন শীষ্য দুধ মল্লিক শাহ (দুদ্দু শাহ) প্রমুখ সুফিতত্ত্ববিদ সাধু ও হিন্দুদের মধে মদন দাস গোস্বামী, যদুনাথ সরকার, হারণ চন্দ্র কর্মকার প্রমুখ সমবেতভাবে বৈষ্ণব সাহিত্য বেদান্ত, ইসলামের সু-উচ্চ তাছাওয়াফের গভীর তত্ত্ব আলোচনা করিতেন। প্রায়ই সুফি ফকির ও বৈষ্ণবগণ সুফিমতবাদ ও বৈষ্ণব তত্ত্ব গান ও সিদ্ধান্ত আলোচনায় তৃপ্তিলাভ করিতেন।

এই সমস্ত বিষয় ফকির পাঞ্জু শাহের পিতা পছন্দ করিতেন না। ঐ সংশ্রবে যাতায়াত বা ওঠা-বসা নিষেধ সত্ত্বেও পাঞ্জু শাহ গোপনে যাতায়াত করিতেন। কখনও ইহা প্রকাশ পাইলে ইহার লাঞ্ছনার সীমা থাকিত না। একইভাবে পিতা বর্তমান থাকা পর্যন্ত তাঁহার মনোকষ্টের ভয়ে ইনি সঙ্গোপনে গভীর আগ্রহ সহকারে সুযোগমত সাধু সঙ্গে সময় কাটাইতেন।

২৪/২৫ বৎসর বয়সে ইঁহার বিবাহ। ১২৮৫ সালের ২০ ভাদ্র ইহার পিতা পরলোক গমন করেন।

পিতার মৃত্যুর কিছুদিন পর ইনি খেরকা খেলাফত ধারণ করেন। এই সময় হইতেই তাঁহার ধর্মজীবন আরম্ভ হয়।

হরিশপুর গ্রামের দক্ষিণ প্রান্তে হেরাজতুল্ল্যা খোন্দকার নামে সুফিতত্ববিদ সাধুর নিকট ইনি দীক্ষিত হন। ইনি গুরুনিষ্ঠা ও গুরুর সেবাযত্ন একান্ত আগ্রহ প্রকাশ করেন।

প্রায় ৩৩/৩৪ বৎসর হইতেই ধর্মানুরাগ জ্ঞান গরিমায় মুগ্ধ হইয়া ২/৪ জন করিয়া ইহার শিষ্যত্ব গ্রহন করিতে থাকে। এই সময় ইনি ‘ছাদেকী গওহর’ নামে একখানি কেতাব রচনা করেন। এবং সুফি মতবাদ সম্বন্ধীয় গান রচনা করিতে আরম্ভ করেন। ক্রমেই দেশ দেশান্তরে শিষ্য সংখ্যা বর্ধিত হইতে থাকে। নিজ জেলা ছাড়াও ফরিদপুর , নদীয়া, রাজশাহী, পাবনা, রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, খুলনা, সুদূর আসাম বিভাগেও অনেকে ইঁহার শিষ্যত্ব গ্রহন করেন। আজিও বাংলার বহুস্থানে ইহার রচিত পদাবলী আগ্রহ সহকারে গীত হয়। জীবনে অক্ষয় কীর্তি রাখিয়া ১৩২১ সালে ২৮ শ্রাবণ ৬৩ বৎসর বয়সে ইনি পরলোকে গমন করেন। 

সং হতভাগ্য মধ্যম পুত্র

খোন্দকার রফিকউদ্দিন

সাং- হরিশপুর, পোঃ সাধুগঞ্জ, জেলাঃ যশোহর   

 

পদাবলীঃ 

 

১. দীনের রাছুল এসে, আরব শহরে দীনের বাতি জ্বেলেছে ।।
দীনের বাতি রাছুলের রুপ উজালা করেছে।।

 

মহম্মদ নাম নূরেতে হয়, 

নবুয়তে নবী নাম কয়, 

রাছুল উল্লা ফানা ফিল্লাহ, 

আল্লাতে মিশেছে ।। 

 

মহম্মদ হন সৃষ্টিকর্তা, 

নবী নামের ধর্ম দত্তা,  

শরিয়তের ভেদ ওতে 

রেখে শরা বুঝায়েছে ।। 

 

জাহেরা ভেদ জাহেরাতে, 

আশেকের ভেদ পুসিদাতে, 

মহর নবুয়ত আশকদারকে 

দেখায়ে দিয়েছে ।। 

 

রাছুল রুপ যার মনে আছে, 

মনের আঁধার ঘুচে গেছে, 

অধীন পাঞ্জু ভাব না জেনে 

ভ্রমেতে ভুলেছে ।। 

 

২. জীব তরা’তে তরিকতের কিস্তি নবী ঘাটে এনেছে ।। 

গোনাহ গারে নিবেন পারে তরিক যে ধরেছে ।। 

 

নবী দিচ্ছে তরিক জাহের, 

পুসিদাতে ভেদ হয় খোদা, 

পুসিদা তরিক রাছুল 

ছিনাতে দিয়াছে ।। 

 

বেহেস্ত পাবে তরিক জাহেরা, 

পুসিদাতে পাবে খোদা, 

আশকদারে খোদার জন্য 

বেহাল হয়েছে ।। বেহেস্তের আশা দোজখের ভয়, আশকদারের মনে না হয়, আল্লাপানে অহনিশি চাহিয়া রয়েছে ।। মজবুত তরিক এই হয়, তরিক কিস্তি আশেকে পায়, অধীন পাঞ্জু  ভাব না জেনে ভ্রমেতে ভুলেছে ।।

  1. নবী চিনা হল ভার ।। নবী না চিনিলে ভবে কেমনে হইবে পার ।। জেন্দা থেকে না পাইলে মলেত পাবানা আর ।। খবর শুনি আরবেতে নবী হলেন এন্তেকাল, হায়াতেল মোরছালিন বলে কেনে লিখেন পরওয়ার ।। দেখে শুনে অনুমানে দেলে ধাঁধা হয় আমার, মনে বলে নবী ম’লে দুনিয়া রইত না আর ।। আছে সত্য নবী বর্ত চিনে কর রুপ নিহার, হিরুচাঁদের চরণ ভুলে পাঞ্জু হল ছারেখার ।।

  2. নবী চিনে কর ধ্যান ।। আহাম্মদে আহাদ মিলে আহাদ মানে ছব্বাহান ।। আতিউল্লাহ আতিয়ররাছুল দলিলে আছে প্রমাণ।। আল্লার নূরে নবীর জন্ম নবীর নূরে  ছারে জাহান, নুরে জানে আদম তনে বশত করে বর্তমান ।। আওল আখের জাহের বাতেন চারিরুপে বিরাজমান, বাতেনে গোপনে থেকে জাহেরে দেন তরিক দান ।। তরিক ধর সাধন কর আখেরে পাবা আসান, বর্তমানে নাহি জেনে পাঞ্জু হয় হতজ্ঞান ।।

  3. দীনের কথা মনে যার হয় ।। আগে দেল কেতাবের খবর লয় ।। মুরশিদ ধরে দেলের খবর জেনে শুনে ফানা হয় ।। শরিয়ত তরিকত, হকিকত মারেফত, মুরিশদের হয়ে গত সুধাইয়া লয়, লাহুত নাছুত মলকুত জবরুত, আল্লা কোথায় আছে মউজুদ, কোন মোকামে মালেক আল্লা, কোন মোকামে বারাম দেয় ।। চার কালেমা চারি কলে, তৈয়ব কালমা মূল নিহারে,  এমান অমূল্য ধন,  তাই  খোঁজে সদায়,  নূরী জহুরী জোব্বরী,  ছত্তরী পিয়ালা চারি,  কবুল করে হুশিয়ারী, রাখেনা সে কূলের ভয় ।। পাঞ্জাতন গুণমনি  জাহের বাতেনে শুনি, আলী নবী মা জননী, এমাম দোন ভাই, পাঞ্জাতনের মর্ম জেনে, পানজাগানা পড়ে মনে, সামনে মুরশিদ বরজখ ধ্যানে কদমেতে ছের ঝোকায় ।। জবরুতের পরদা খুলে, দিবেন মুরশিদ দয়া করে, নূর ছেতারা উদয় হয়ে রুপে ঝলক দেয়, সদা থাকে রুপ নিহারে, দীনের কর্ম তারাই করে, পাঞ্জু বলে মোর কপালে জানি কি করিবেন দয়াময় ।।

  4. মালেক আল্লার আরশ কালেবেতে রয় ।। খুঁজে দেখিনা মন হায়রে হায় ।। আছে কালেবেতে কালুবালা, কালাম উল্লায় জানা যায় ।। কুলুবেল মুমেনিন বলে, কোরানে সাঁই খবর দিলে, দেখনা দুই নয়ন খুলে, ছাব্বিশ ছেপারায়, ছফিনাতে দেখে শুনে, ছিনার এলম লেহ জেনে ছিনার এলম ছফিনাতে; জানবে কেন দীন কানায় ।। নবী আদম বারিতালা এক দমে হয় লীলা খেলা, দলিল বলেছেন খোলা, রাছুল দয়াময়, নাফাকত ফিহে বলে, দেখনা হাদিছ দলিল, দীন কানার কথায় ঘুরে মলে, পেড়পীড়ে মদিনায় ।। আঠার হাজার আল্লার আলম, আঠার মোকামে মিলন, আরশ কোরশ লোহ কলম, অজুদে সবায়, এই কালেব মালেক আল্লা,  চেঁচালে পড়িবে গলা, পাঞ্জু তমনি আলাঝালা, আছমানে চেয়ে খোদা চায় ।।

  5. মাবুদ আল্লার খবর না জানি ।। আছে নির্জনে সাঁই নিরঞ্জন মণি।। অতি নিগুম ঘরে বিরাজ করে সাঁই গুণমণি, তথা নাহি দিবা রজনী । যখন নাহি ছিল আছমান আর জমিন, অন্ধকারে হেমান্ত বাও বইছিল আপনি, সেই বাতাসে, গায়বী আওয়াজ হলো তখনি, তা জানেন জগৎ জননী ।। সেই আওয়াজ ভরে ডিম্ব হয় শুনি, ডিম্ব ভেঙ্গে আছমান জমিন গঠলেন রব্বানি, শুনি সাততালা আছমানের পরে রয়েছেন তিনি, আছে অচিন মানুষ অচিনি । সেই ডিম্বর খেলা আদমে খেলে, চেতন মুরশিদ চিনে ধরলে সে ভেদ জানাবে, পাঞ্জু বলে না ডুবিলে রতন কি মিলে, ডুবিলে হবি ধনি ।।

শুধু কথায় রতন কি মেলে ।। চেতন মানুষেরই সঙ্গ না মিলে ।। আল্লা নবী আদম ছবি করেছে নিলে, দেখ কে আছে মন কি কলে ।। সিংহাসনে বসে একেলা, ছাদেকী এস্ক পয়দা করলেন মালেক আল্লা, সেই এস্ক জোরে নূরে পয়দা করলেন রাছুলে, এসে দোস্তী করলেন দ্বিদলে ।। সেই মহব্বতে আদম গঠিলে, হাওয়া আদম আল্লা নবীর ভেদ কেবা বলে,  ভেদ জানিলে অধর মিলে এ ত্রিভুবনে, জানা যাবে মুরশিদ ভজিলে ।।  বেহেস্ত যাওয়ার আশা করিলে, দোজখ বেহেস্তের মালেক যে জন  তারে না চেনে, অধীন পাঞ্জু বলে ভেদ না জেনে কলমা পড়িলে, শেষে পড়বিরে গোলেমালে ।।

শেয়ার করুন:

অন্যান্য পোস্ট

আরশি নগর কেমন শহর ? বিষয় ফ্রয়েডের আবিষ্কার ও মহাত্মা লালন ফকির | সলিমুল্লাহ খান

এই লেখার বিষয় মহাত্মা লালন ফকির। তবে মালিকের অনুমতি পাই তো প্রথমে বন্দনা করি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । প্রখ্যাত রবীন্দ্র-বিশেষজ্ঞ

বিস্তারিত

ফ কি র লা ল ন শা হ | ডক্টর উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য

রবীন্দ্রনাথ-সংগৃহীত লালন শাহ ফকিরের কুড়িটি গান সর্বপ্রথম ‘প্রবাসী’র ‘হারামণি’ শীর্ষক বিভাগে প্রকাশিত হয় (প্রবাসী, ১৩২২, আশ্বিন-মাঘ সংখ্যা)। ইহার পূর্বে লালনের

বিস্তারিত

You cannot copy content of this page